অনলাইন সোনারগাঁও.কমঃ নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ মঙ্গলবার শহীদ নূর হোসেন দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রাজধানীর জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাজধানীর নূর হোসেন স্কায়ারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।শহীদ নূর হোসেন সংসদের কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে নূর হোসেন চত্বরে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে জুরাইন কবরস্থানে নূর হোসেনের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ। রাজধানীর ‘শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার’-এ সকাল সাড়ে আটটায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নূর হোসেনের বড় ভাই বাংলাদেশ আওয়ামী মটর চালক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি সংগঠনের নেতাকর্মী ও নিজ পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে হাজী মোঃ আলী হোসেন। পরে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে নূর হোসেনের বড় ভাই আলী হোসেন নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ও দোয়া পাঠ করেন। দিবস উপলক্ষে ‘শহীদ নূর হোসেন ফাউন্ডেশন’ সকাল ৯ টায় জুরাইন কবরস্থানে পূষ্পমাল্য অর্পণ এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। এ ছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী মহিলা লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, গণফোরাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নূর হোসেন স্কায়ারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার তৎকালীন 'জিরো পয়েন্ট'- (বর্তমান নূর হোসেন স্কয়ার) এ পুলিশের গুলিতে নিহত হন যুবলীগকর্মী নূর হোসেন। এরপর থেকে এ স্থানটির নামকরণ করা হয় 'নূর হোসেন চত্বর'।দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নূর হোসেন চত্বরে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ১০ নভেম্বর এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৮৭ সালের এই দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সাহসী সৈনিক নূর হোসেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ এই শ্লোগান শরীরে ধারণ করে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। সেদিন প্রতিবাদের পুরোভাগে থাকা শহিদ নূর হোসেনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ।প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, অনেকের জীবন উৎসর্গের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছিল। তিনি নূর হোসেনসহ সব শহিদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বুকে ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোটের মিছিলে যোগ দেন নূর হোসেন। মিছিলটি রাজধানীর জিরো পয়েন্টে পৌঁছলে একটি বুলেট এসে নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।নূর হোসেনের আত্মত্যাগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান ও অপ্রতিরোধ্য রূপ লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ এর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারের পতন ঘটে। নূর হোসেনসহ অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের পথ বেয়ে স্বৈরাচার এরশাদের পতনকে ত্বরানিত্ব করে দেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।
তার বীরোচিত জীবন দানের ফলে নূর হোসেন সেই সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন। এরপর থেকে নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা সেই শ্লোগান ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রতীক।
পরিবারের অথর্নৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর শহীদ নূর হোসেন পড়াশুনা বন্ধ করে মোটর চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ঢাকা মিনিবাস সমিতি চালিত বাসের সুপারভাইজর হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তারুণ্যে পা দিয়েই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি যে স্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, তার নামানুসারে সেই জিরো পয়েন্টের নামকরন করা হয়েছে নূর হোসেন স্কয়ার।
Post a Comment