এমপি খোকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার যোগ্যতা নাই.......জাহাঙ্গীর আলম

অনলাইন সোনারগাঁও.কমঃ নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নাম ফলক ভেঙে ফেলার ঘটনায় জাতীয় পার্টির সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকাকে ক্ষমা করবেন না বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি প্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের তিন সাংসদ ও নেতাকর্মীদের বিপদেও প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন এই নেতা।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন তার নাম ফলক ভাঙার জন্য সোনারগাঁয়ের জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি খোকাকে অভিশাপ দিচ্ছি না। আমি মনে করি খোকা তার কৃতকর্মের জন্য একদিন অনুশোচনা বোধ করবে।

২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে কর্মকর্তা কর্মচারীদের টানা তিনদিনের ধারাবাহিক কর্মবিরতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আনোয়ার হোসেন এসব কথা বলেন।

ওই ঘটনার পর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে আনোয়ার ভাই ক্ষমা করলেও আমি ক্ষমা করবোনা। সে যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। খোকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নাম ফলক ভেঙেছে। আনোয়ার হোসেনের উপর আঘাত মানে নৌকার উপরে আঘাত। এই আঘাত কিছুতেই সহ্য করবোনা। আনোয়ার ভাই ক্ষমা করলেও আমি ক্ষমা করবোনা। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপরে আঘাত আমি কিছুতেই মেনে নিবনা।

তিনি আরো বলেন, শুধু আনোয়ার ভাই নয় আজকে যদি মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, এমপি শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবুর ক্ষেত্রেও এমন কোন অন্যায় হতো এমন কিছু হতো আমি প্রতিবাদ করতাম। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের তিনজন সাংসদ সহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপরে কোন রকম অন্যায় অবিচার হলে আমি প্রতিবাদ করে যাবো। আমি আন্দোলন করে যাবো। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক।

তিনি বলেন, এমপি খোকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার যোগ্যতা নাই। আজকে সে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চড়ে এমপি হয়েছে। সেই খোকার লোকজন সোনারগাঁয়ে জাতীয় পার্টির সমাবেশ করে হুংকার দেয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিপক্ষে কথা বলে। সেই সভায় বিএনপি লোকজনও জাতীয় পার্টিতে ভর করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমালোচনা করেছে যা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের ২নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ১৩ ভোটের বিপরীতে ৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তিনি শহর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন।

২নং ওয়াডের নির্বাচনে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের ‘নীরবতা’ জয়ে সহায়ক ছিল ওই সময়ে মন্তব্য করেন নির্বাচিত সদস্য জাহাঙ্গীর আলম যিনি এক সময়ে সরকারী তোলারাম কলেজের নির্বাচিত জিএস ছিলেন আর ভিপি ছিলেন শামীম ওসমান।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে এখন আওয়ামী লীগে কোন ভেদাভেদ নাই। আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু আলী আহাম্মদ চুনকা। তাঁর হাত ধরে আমি রাজনীতিতে আসি। আমি আইভীকে শ্রদ্ধা করি তিনি এখন মেয়র। আমার চেয়ে বয়সে কম হলেও চেয়ারে বড়। তিনি আমাকে ভোট দিয়েছেন বিশ্বাস করি। শামীম ওসমান আমার বন্ধু। তিনি যখন ভিপি তখন আমি নির্বাচিত জিএস। একত্রে রাজনীতি করেছি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর যখন ভোট হয়েছে জেলা পরিষদের তখন তিনি ভারতে ছিলেন। তখন তিনি অনেকটাই নীরব ছিলেন। সে কারণে আমার জয় সহজ হয়েছে মনে করি।’

জাহাঙ্গীর আলমকে ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর সেদিন আইভীকে, পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকেও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আনোয়ার হোসেনের পা ছুঁয়েও সালাম করেন জাহাঙ্গীর। যদিও নির্বাচনে আনোয়ার হোসেনের পছন্দের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আহসান হাবিব কোন ভোট পায়নি।

২৭ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরকে দেখা গেছে রাইফেল ক্লাবে শামীম ওসমানের সঙ্গে। সে রাতে তিনি রাইফেল ক্লাবে আসলে শামীম ওসমানের বন্ধুরা জানান স্বাগত। ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। পরে রাতে এক টেবিলে জাহাঙ্গীর আলম ও শামীম ওসমানকে দেখা গেছে খিুচড়ি খেতে। শেষে একত্রে ছবিও তুলেছেন।

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘শামীম ওসমান দেশে আসার পর আমাকে ফোন দিয়েছে আমিও তাঁকে ফোন দিয়েছি। শামীম ওসমান আমার জয়ে খুশী হয়েছে। পরে তিনি আমাকে বললো আসো একদিন বন্ধুরা মিলে রাতে খাবো। তাই গিয়েছিলাম। একত্রে খেয়েছি কিন্তু কোন রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। জেলা পরিষদ নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’

গত ১৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশে সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠে।

এই ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফুঁসে উঠে। গত ১৮ নভেম্বর বিকেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাতের নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। পরবর্তীতে ১৯ ও ২০ তারিখ সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের একাংশ প্রতিবাদ সমাবেশ করে এমপি খোকাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২১ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরাও উপস্থিত ছিল। ওই কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা বিরোধী দল।’ মূলত এ বক্তব্যের পরেই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরের দিন জাহাঙ্গীর আলম বক্তব্যে অনড় থাকলেও ২৩ নভেম্বর তিনি ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেন।

এর ধারাবাহিকতায় ২৪ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে (ঢাকা বিভাগ)। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল সাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি জাহাঙ্গীর আলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতা বিরোধী দল হিসেবে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বক্তব্য রাখার অপরাধে আপনাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এখানে উল্লেখ থাকে যে, ২১ নভেম্বর ২০২০ তারিখে আপনার দেওয়া বক্তব্য ক্ষমার অযোগ্য। যাহা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতোমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে।’

অব্যাহতির ব্যাপারে জাহাঙ্গীর বলেন, আমি গত ২১ তারিখ যে বক্তব্য দিয়েছি সেখানে স্লিপ অফ টাং একটা ভুল হয়েছে। বক্তব্যের উত্তেজনার মুহূর্তে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা স্বপক্ষের দল বলার ক্ষেত্রে মুখ ফসকে স্বাধীনতা বিরোধী বলে ফেলেছি। এটা বক্তব্যের উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে আর মানুষ মানুষকে ক্ষমা করবেনা। কিন্তু এরপরও আমি আজকে পত্রিকাগুলোতে বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছি। লিখিত আকারে এই বিবৃতি দিয়েছি। অগঠনতন্ত্রভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেক্রেটারী আমাকে অব্যাহতি দিতে পারেনা। এটা গঠনতন্ত্র বর্হিভূত কাজ হয়েছে।

সূত্রঃ নিউজ নারায়ণগঞ্জ

২৮/১১/২০২০.