আড়াইহাজারে লাখ লাখ টাকার নদ খননের মাটি অবৈধভাবে অন্যত্র বিক্রি করছে কুচক্রী মহল

অনলাইন সোনারগাঁও.কমঃ আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ব্রহ্মপুত্র শাখা নদের তীরে রাখা নদ খননের মাটি হরিলুটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে একটি চক্র মহল। ভেকু দিয়ে চব্বিশ ঘন্টাই শত শত ড্রাম ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে মাটি অন্যত্র বিক্রি করছে। এ যেন মাটি কাটার মহোৎসব। লাখ লাখ টাকার এসব মাটি কেটে নিয়ে গেলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।


মাটি কাটতে গিয়ে এবং মাটি ভর্তি গাড়ির চলাচলের রাস্তার জন্য নদ তীরবর্তী কৃষকের ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। স্থানীয়রা এ ব্যপারে প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মাটি নেয়ার রাস্তা করতে গিয়ে ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতিসাধনে স্থানীয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, এক বছর আগে ব্রহ্মপুত্র নদের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার জন্য নদ খননের প্রথম পর্যায়ের কাজ করা হয়েছে। নদ খনন করে তলদেশের মাটি তীরবর্তী এলাকায় রাখা হয়। এসব মাটি প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষ বিভিন্ন দাতব্য, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দান করার বিধান রয়েছে। কিন্তু গত এক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের আড়াইহাজার পৌরসভা, দুপ্তারা ও ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের তীরবর্তী রাখা এসব মাটি ভেকু দিয়ে কেটে শত শত ড্রাম ট্রাক ও ট্রলিতে করে স্থানীয় একটি চক্র বিক্রি করছে বিভিন্নস্থানে। মাটি নেয়ার গাড়ি চলাচলের রাস্তা করতে গিয়ে তীরবর্তী কৃষকের জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। তীরবর্তী তালগাছ, আম গাছসহ বেশ কিছু বড় ফলজ গাছ ভেকু দিয়ে তুলে ফেলে দেয়া হয়। স্থানীয়রা বাঁধা দিতে গিয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।  

চামুরকান্দি গ্রামের নেজালউদ্দিন জানান, ব্রহ্মপুত্রের নদের তীরবর্তী জমিতে তিনি সীমের চাষ করেছেন। প্রচুর সীম ধরছে গাছে। রাতের আধারে মাটিখোরেরা তার এসব সবজির টাল সম্পুর্ন নষ্ট করে দিয়েছে। এতে তার ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই এলাকার হাসানের সীমে টাল, ছোট বিনাইরচর গ্রামের কামাল হোসেন, গোলজার হোসেন, হাফেজের সীম, কলাসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট করে মাটির ড্রাম ট্রাক ও ট্রলি নেয়ার জন্য রাস্তা করে। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ’ ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি ড্রাম ট্রাক মাটি এক হাজার ১শ’ থেকে দুরত্ব অনুযায়ী টাকা অংক বিক্রি বৃদ্ধি পায়। চামুর কান্দির আলমগীর, আসাবুদ্দিন, ছোট বিনাইরচর গ্রামের জহিরুল ইসলাম, আলমসহ অনেকেই মাটির চক্রের লোকদের কাছ থেকে মাটি কিনেছেন। 

পাঁচ গাঁও চরপাড়া গ্রামের জুনায়েত জানান, নদের তীরবর্তী জমিতে তিনি লাউ ও সীমের চাষ করে। আশানুরূপ ফলনও হয়েছে। রাতের আধারে মাটিখোররা তার এসব সবজির টাল সম্পুর্ন নষ্ট করে দিয়েছে। ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। একই ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে নাঈম, রাসেল, আঃ করিম, জামালউদ্দিন, সাইফুলসহ পাঁচগাও চরপাড়া এলাকা অনেকের। প্রত্যেকের নদের তীরবর্তী জমিতে তিনি লাউ ও সীমের চাষ করেছেন। মাটির ড্রাম ট্রাক ও ট্রলি নেয়ার জন্য তাদের এসব সবজী নষ্ট করে রাস্তা করেছেন। এ ব্যপারে স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

মাটি চক্রের চামুর কান্দির সুমন মিয়া জানান, খনন কাজে জড়িত অনিক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে মাটি কিনে বিক্রি করছেন। তবে তিনি তার কেনা মাটির অংশ থেকে বিনা খরচে মারকাস মসজিদ ও স্থানীয় একটি স্কুলে মাটি পৌছে দিয়েছেন। তবে মাটি বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে অনিক বলেন, মাটি নেয়ার কোন বৈধতা নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকে আজই বন্ধ করে দেয়া হবে।

দুপ্তারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহিদা মোশারফ জানান, নদী তীরবর্তী কৃষকের ফসল নষ্ট করে মাটি নেয়ায় ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক অভিযোগ করে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে বেশ কয়েকবার অবগত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমরা সহযোগিতা করবো।

এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ সোহাগ হোসেন জানান, নদ খননের মাটি জনস্বার্থে ব্যবহৃত কোন দাতব্য, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে নিতে পারবে। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠান এসব মাটি নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করেনি। কারা এসব মাটি নিয়ে যাচ্ছে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।