অনলাইন সোনারগাঁও.কমঃ বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও উপজেলার সবচাইতে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো মাদক। যার ভয়াল থাবা থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেনা যুব সমাজও। এ অবস্থায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা ও বেশি আলোচিত বিষয়। সোনারগাঁ রাজধানীর খুব নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে উদ্বেগজনক হারে মাদক ব্যবসা বেড়েই চলেছে। উপজেলার এমন কোনো স্থান নেই যেখানে মাদকের সয়লাব নেই।
সোনারগাঁও উপজেলার চতুর্দিক নদীর তীরবর্তী হওয়ায় খুব সহজেই এখানে নদীপথে মাদক আসে। মাদক ব্যবসায়ীরা মহাসড়কগুলোতে পুলিশ চেকপোষ্ট ফাঁকি দিয়ে মাদক সরবরাহ করছেন নিরাপদে।
বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের মধ্যে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ও গাজা অন্যতম। তবে বর্তমানে ছোট ছোট শিশু ও কিশোররা ড্যান্ডি নামক মাদক সেবনে ঝুকে পড়েছে। এগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ঔষধও বাজারে পাওয়া যায়। যেগুলোর অধিক সেবনে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
সূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁও উপজেলার সর্বত্র খুব সহজেই ইয়াবা পাওয়া যায়। বিশেষ করে মিয়ানমার ও ইন্ডিয়া থেকে আসা ইয়াবার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই মাদক দশ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৫০ বছরের বৃদ্ধ শিক্ষক সরকারি কর্মচারী ব্যবসায়ী থেকে চিকিৎসক সবাই আছেন এই পথে।
বড়ই মর্মস্পর্শী আর বিস্ময়কর তাঁদের জীবন। মাদকের নিষ্ঠুর যাত্রায় কেউ লাখ লাখ টাকার ব্যবসা ধ্বংস করে সর্বশান্ত হয়ে জড়িয়েছেন ভয়ংকর অপরাধ চক্রে। অনেক পরিবার তছনছও হয়ে গেছে। এসব কারবারে সবচেয়ে বেশী আসক্তি দেখা গিয়েছে উঠতি বয়সের তরুন-তরুনীদের মাঝে।
উপজেলার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় মাদকের কেনা-বেচা চলছে পুরোদমে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বাড়িমজলিশ গ্রামে মাদক বিক্রির হাট বসান আসাবুদ্দিন নামের এক মাদক ব্যবসায়ী। বিশেষ করে বিকেলের পর মাদক বিক্রেতা ও ক্রেতাদের উৎপাত বেড়ে যায়। অভিনব কৌশলে বিভিন্ন পথে এই উপজেলায় আসছে মাদকদ্রব্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোক জানান, সোনারগাঁওয়ে মাদকের ব্যাপকতা সম্পর্কে প্রশাসন অবগত থাকলেও প্রশাসনের নীরবতা লক্ষণীয়। পুলিশ বেশ কয়েকবার এলাকাগুলোতে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় অথবা টাকার বিনিময়ে তারা বের হয়ে এসে পুনরায় এই ব্যবসা শুরু করে।
এছাড়া আইনজীবীরাও এর জন্য অনেককাংশে দায়ী। কারণ আইনজীবীদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীরা আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আসে। মাদক নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতিসহ পারিবারিক কলহ বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যত প্রজম্ম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসনকে অগ্রগামী ভূমিকা পালনের আহবান জানান সোনারগাঁও বাসী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিগারেট থেকে নেশা শুরু করলেও মাদকের প্রতি আসক্তি ধীরে ধীরে শুরু হয়। মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতে গিয়েই কিশোর ও তরুণ সমাজ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
এ সুযোগে মাদক ব্যবসায়ী ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র’র সদস্যগণ খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা কাজে তাদের ব্যবহার করতে থাকে। মাদকের এই নেশার জালে একবার জড়িয়ে পড়লে কেউ আর সহজে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে মাদকসেবীরা দিনে দিনে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
মাদকের ভয়াবহ বিস্তার সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে সোনারগাঁওয়ে বড় কোনো সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। মাদকবিরোধী উল্লেখযোগ্য সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা বা মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিও হচ্ছে না।কিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের ব্যানার ফেষ্টুনে মাদক বিরোধী বক্তব্য তুলে ধরলেও কাজে কর্মে নেই ।
সচেতন মহল মনে করে প্রশাসনসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের উচিত নিজে সচেতন হয়ে এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
Post a Comment